• আপনি কি ভুল করেছেন?
    বারবার ভুল করা মেধা বিকাশে ভূমিকা রাখে।

 

  • বারবার ভুল করা মেধা বিকাশে ভূমিকা রাখে।

    কোন মানুষই ভুল করতে পছন্দ করেন না। কেননা ভুল করার কারণে অনেকে বিব্রত বোধ করেন, হতাশ হয়ে পড়েন, হীনমন্যতায় ভোগেন।

    জীবনের প্রতিটি কাজ সঠিক হওয়াটা জরুরি হলেও কাজ করতে গিয়ে মাঝেমাঝে জগাখিচুড়ি করে ফেলাটা খারাপ কিছু নয়।

    কেননা মানুষের ভুল হবেই। কখনো ভুল করেনি, এমন মানুষের নজির নেই।

    বরং ভুল মানুষের অপকারের চাইতে উপকার করেছে বেশি। চলুন জেনে নেই ভুলের কিছু ইতিবাচক দিকের বিষয়ে।

  • ১. নতুন কিছু শেখায়
    কথায় আছে, “‘আপনি আপনার ভুল থেকেই শেখেন”।
    বারবার ভুল করা আমাদের মস্তিষ্ক এবং দক্ষতা বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
    ভেবে দেখুন একটি শিশু কিভাবে হাঁটতে শেখে। একজন জিমন্যাস্ট কিভাবে এতো জটিল কসরত আয়ত্তে আনে?
    ভুলকে স্বাভাবিকভাবে নিতে শিখতে হবে।
    ছবির ক্যাপশান,
    ভুলকে স্বাভাবিকভাবে নিতে শিখতে হবে।
    অথবা কোন রান্নার প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণকারী শো স্টপার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়, স্বাদ নিখুঁত করতে একই জিনিস কতবার রান্না করেন।
    মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মনরোগবিদরা জানান, ভুল থেকে শিখলে মনের ‘বিকাশ হয়। বুদ্ধিমত্তা এমন একটি বিষয় যেটা নিয়ে কাজ করলে এর উন্নয়ন সম্ভব।
    এক থেকে তিন বছর বয়সী শিশুদের ওপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে শিশুরা ভুলগুলোর প্রতি বেশি মনোযোগ দিয়েছে তারা ততোই দ্রুত শিখেছে।
  • ২. নতুন পথের সন্ধান দেয়
    ভুলের কারণে অনেকের জীবনেই অনেক অপ্রত্যাশিত ইতিবাচক ঘটনা ঘটে।
    হয়তো কেউ চাবি ভুল করে হারিয়ে ফেলেছেন। সেটা খুঁজতে গিয়ে এমন কিছুর সন্ধান পেয়ে গেলেন যেটা হয়তো আরও বেশি জরুরি।
    পৃথিবীতে মাইক্রোওয়েভ থেকে শুরু করে পেস মেকার পর্যন্ত। ছোট বড় যতো উদ্ভাবন রয়েছে, তার সবকিছু শুরু হয়েছিল কোন না কোন ভুল থেকে।
    যদি স্কটিশ বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ফ্লেমিং ১৯২৮ সালে তার ছোট ভুলের কারণে পেনিসিলিন উদ্ভাবন থেকে পেছনে সরে যেতেন, তাহলে আমাদের জীবন হয়তো এতোটা সহজ হতো না।
    তার এই বিস্ময়কর আবিষ্কার এখন কোটি মানুষের জীবন রক্ষায় করে চলছে।
    প্রতিট ভুল আমাদের নতুন পথের সন্ধান দেয়।
    ছবির ক্যাপশান,
    প্রতিট ভুল আমাদের নতুন পথের সন্ধান দেয়।
  • ৩. নিজেদের চিনতে শেখায়
    অস্কার ওয়াইল্ড বলেছিলেন, “মানুষ নিজেদের ভুলগুলোকে যে নামে ডাকে তাই হল অভিজ্ঞতা”।
    এ কারণে নিজেদের ব্যাপারে বা জীবন সম্বন্ধে শেখার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল ভুল করা।
    একটি বড় পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার মাধ্যমে আপনি শিখবেন কিভাবে হতাশা মোকাবিলা করতে হয়।
    পরিবারের গোপন কিছু কথা ভুল করে শুনে ফেললে, আপনি বিব্রতকর পরিস্থিতি সামলে নিতে শিখবেন।
  • ৪. লক্ষ্য অর্জনের পথ খুলে যায়
    সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং লেখক থিওডোর রুজভেল্ট বলেছেন, “যে ব্যক্তি জীবনে কখনো ভুল করেনি, সে জীবনে কোন কাজই করেনি।”
    ভুল করার কারণে আমরা প্রায়ই পুনরায় চেষ্টা করতে বা নতুন কোন চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পাই।
    ভুল থেকেই নতুন কিছু শুরু করার আগ্রহ জাগে।
    ছবির ক্যাপশান,
    ভুল থেকেই নতুন কিছু শুরু করার আগ্রহ জাগে।
    তবে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ভুলকে মেনে নিলে আর এমনটা হবে না।
    বরং ভুল থেকে শিখে জীবনে কোন বাঁধা ছাড়া এগিয়ে গেলে সহজেই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।
  • ৫. অগ্রাধিকারকে স্পষ্ট করতে সাহায্য করে
    বিশ্বখ্যাত ঔপন্যাসিক জে কে রাওলিং ২০০৮ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে দেয়া এক বক্তব্যে বলেন, তার বয়স যখন পঁচিশের কাছাকাছি তখন তিনি জীবনের বিশাল সব ভুল আর ব্যর্থতার মুখোমুখি হন।
    তার স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
    এরপর মেয়েকে নিয়ে চরম দরিদ্রতার মুখে পড়েন তিনি। জীবনে বার বার ব্যর্থ হয়েছেন, হতাশ হয়েছেন।
    কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার লেখক পরিচয় আজ তাকে এই অবস্থানে তুলে এনেছে।
    মিজ রাওলিং বলেন, “আমি যা নই, সেটা ভেবে আমি নিজের সঙ্গে ভান করা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। যে কাজটা আমার জন্য গুরুত্ব রাখে আমি সেই কাজেই নিজের সমস্ত শক্তি উজাড় করে দিতে শুরু করলাম। নিজেতে সব ভয় থেকে মুক্ত করে দিলাম। কারণ আমি বুঝে গিয়েছিলাম আমার ভয়টা কিসে এবং কেন। আসল কথা আমি বেঁচে আছি। আমার একটা মেয়ে আছে যাকে আমি ভালবাসি। সে সময় আমার সম্বল ছিল মাথাভর্তি গল্পের চিন্তা আর একটা পুরানো টাইপ রাইটার।”
    থিওডোর রুজভেল্ট বলেছেন, “যে ব্যক্তি জীবনে কখনো ভুল করেনি, সে জীবনে কোন কাজই করেনি।”
    ছবির ক্যাপশান,
    থিওডোর রুজভেল্ট বলেছেন, “যে ব্যক্তি জীবনে কখনো ভুল করেনি, সে জীবনে কোন কাজই করেনি।”
  • ৬. ভুল হতে পারে হাসির খোরাক
    উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের বিশ্বখ্যাত নাটক “এ কমেডি অফ এরর’স” থেকে শুরু করে ব্রিটিশ টিভি ব্যক্তিত্ব জন ক্লিসের অনুষ্ঠান “ফল্টি টাওয়ার্স” পর্যন্ত বেশিরভাগ জনপ্রিয় কমেডি তৈরি করা হয়েছে ভুল আর ভুল বোঝাবুঝির ওপর ভিত্তি করে।
    কারণ একটু দূর থেকে দেখলে , ভুলগুলোকে বেশ হাস্যকর মনে হতে পারে।
    হয়তো একদিন আপনি উদ্ভট পোশাক পরে আছেন। আর সেদিনই বাড়ির দরজায় তালা পড়ে গেল। তখনই দেখা হয়ে গেল পছন্দের কারো সঙ্গে।
    তাৎক্ষণিকভাবে পুরো ব্যপারটায় বিব্রত হলেও কিছুদিন পর এই কথাটা ভেবেই আপনি খিলখিল করে হাসতে থাকবেন।